Wednesday, July 24, 2013

DISHONOUR OF WOMEN IN KOLKATA

Ganashakti

এ লজ্জা রাখবো কোথায়?

বনানী বিশ্বাস

২০০৭ সালে ছেলের কাছে জার্মানিতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। বিভিন্ন শহরে গেছি আমার পছন্দ মতন শহরে ছেলে নিয়ে গেছে আমাকে। সেটা আমার লেখার উদ্দেশ্য নয় আজ। ভার্সাই শহর থেকে ট্রেনে ফিরছিলাম। ট্রেনে আমার পাশে এক ফরাসী মহিলা বসেছিলেন। আমার যেহেতু লোকের সঙ্গে আলাপ করার স্বভাব পাশের সিটে বসা মহিলার সঙ্গে আলাপ জমে উঠল কয়েক মিনিটেই। উনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী, সমাজকল্যাণমূলক কাজেই ঘুরে বেড়ান দেশ বিদেশে। আমি যেহেতু ভারতীয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন, আমাদের কলকাতা শহর সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন তিনি ‘‘ক্যালকাটা সিটি অব জয়’’, সেখানকার মানুষ ভীষণ আন্তরিক, প্রয়োজনে সাহায্য করে। অভিভূত হয়ে বললেন ‘এতো আন্তরিকতা খুব কম শহরেই পাওয়া যায়।’ বিদেশিনীর প্রশংসায় স্বাভাবিকভাবে আমিও আপ্লুত হলাম।

২২শে জুলাই এক ফরাসীর যুবতী টেলিগ্রাফ পত্রিকায় মহিলার সাংবাদিককে লেখা চিঠি পড়ে লজ্জায় আমার মাথা নিচু হয়ে গেল। আরও লজ্জিত হলাম লিখেছেন ‘‘লজ্জা ভুলে যাও শহরের জন্য লড়াই কর’’, ১৩ই জুলাই যোধপুর পার্কে নিজেদের বাড়ি ফিরছিলেন এক ফরাসী তরুণী ও তাঁর সহকর্মী। একদল দুষ্কৃতী শ্লীলতাহানির হুমকি দিতে দিতে তাড়া করেছিল তাঁদের। পাঁচজন যুবক চড়াও হয় — তরুণীর উদ্দেশ্যে কুরুচিকর মন্তব্য করার পাশাপাশি তাঁর সহকর্মীকে মারধর করে। ঘটনার পরেই কলকাতা ছেড়ে স্বদেশে ফিরে গিয়েছেন আতঙ্কিত তরুণী। ২০শে জুলাই টেলিগ্রাফের সুদেষ্ণা ব্যানার্জিকে ই-মেলে এবং সমঋতা ভট্টাচার্যকে ফেস বুকে কথা বললেন তি‍‌নি ফ্রান্সের মঁপেইয়ে শহর থেকে। এই প্রথম তাঁর মুখ থেকে সবিস্তার ঘটনা এবং এই শহর সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা গেল।

তিনি জানিয়েছেন ‘‘নারী-পুরুষ, যুব-বৃদ্ধা, ধনী-দরিদ্র সকলে মিলে সর্বশক্তি দিয়ে লড়তে হবে নারী নিগ্রহের প্রতিবাদে এবং কলকাতা শহরে তোমরা যেমনভাবে থাকতে চাও তেমনি‍‌ তৈরি কর।’’

আলিয়াঁস ফ্রান্সে শিক্ষার্থী হিসেবে গবেষণা করতে এসেছিলেন এবং ১৬ই জুলাই তাঁর সমস্ত নির্ধারিত কাজ ফেলে চলে গেছেন। একটা বার্তা রেখে গেছেন কলকাতা শহরের জন্য তাঁকে পালিয়ে আসতে হয়েছে ঠিকই এবং তিনি ফিরে আসবেন কলকাতায় পর্যটক হিসেবে।

২০শে জুলাই ছিল তরুণীর জন্মদিন — তিনি কলকাতায় এবার বন্ধুদের সঙ্গে পালন করতে চেয়েছিলেন। কলকাতার বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ করবেন এইরকমই পরিকল্পনা ছিল। হঠাৎ এমন আকস্মিক ঘটনা ঘটল দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হলেন। প্রিয় কলকাতা শহর থেকে ভয়ে পালিয়ে আসতে হলো। কলকাতাকে ভালবাসার জায়গাটা তাঁর হারিয়ে গেল। কলকাতাকে ভালবেসে যে আনন্দ ছিল আজ সেটা হারিয়ে গেছে।

ভারতীয় ও বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে ভীষণ গর্বিত ও খুশি হয়েছিলেন। অর্জন করেছিলেন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা, কাজ ছেড়ে দিয়ে স্বস্তি পেয়েছিলেন বটে কিন্তু কষ্টও পেয়েছেন। ইন্টার্নশিপ শেষ না করেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন, তাঁর বন্ধুরা রয়ে গেল কলকাতায়। তিনি এখনও পড়াশুনা করেন তাই ফ্রান্সে ফিরে আসাটা খুবই কঠিন এবং ব্যয়সাপেক্ষ হলো।

কলকাতায় ১৩ই জুলাই রাতে ফরাসী তরুণীর সঙ্গে যা হয়েছিল সেটা যে-কোনও জায়গায় হতে পারতো, তিনি এখন নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করেছে কারণ তিনি পালাতে পেরেছেন। কলকাতা তথা প‍‌শ্চিমবঙ্গে এ ধরনের ঘটনা যেন দৈনন্দিন ঘটনা। সংবাদপত্রে রোজই গণধর্ষণ অথবা মহিলাদের শ্লীলতাহানির খবর ওঁর চোখে পড়েছে। কলকাতায় যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁদের ভদ্রতার তুলনা হয় না। একদিনের দুর্ঘটনার সঙ্গে কলকাতার সুখ-স্মৃতিকে তিনি ভুলতে চান না। দুঃখের সঙ্গে জানিয়েছেন যে কলকাতায় সম্প্রতি মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব দেখা গেছে। কলকাতায় থাকাকালীন অনেক মায়েদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন তাঁরা মেয়েদের বাড়ির বাইরে যেতে দিতে ভয় পান। বিপদের আশঙ্কা করেন। শহরে এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁদের দৃষ্টিটা খারাপ তাঁরা কারণে অকারণে মহিলাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করার চেষ্টা করে। কলকাতায় মেট্রো বা বাসে চলাফেরা করার সময়ে তাঁরও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। ১৩ই জুলাই নিজের বাড়ির কাছে যেটা হলো তা অভাবনীয়। তাঁর মনে হয়েছে এই ধরনের কাজ যে কেউ যখন তখন করতে পারে, তাদের বাধা দেবার কেউ নেই। সমাজের একাংশ শৈশব থেকে প্রবৃত্তিটাকে প্রশ্রয় দেয়। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন এইরকম পরিস্থিতির পরিবর্তন হতে বাধ্য। সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই উদ্যোগী হবেন।

কলকাতার বন্ধুরা যেভাবে পাশে থেকে সমবেদনা জানিয়েছেন — তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন যে রাতে তাঁর তিনজন বন্ধুদের যারা ওনাকে সাহায্য করেছেন। কলকাতাবাসী হিসেবে তাঁরা লজ্জিত। বন্ধুদের জানিয়েছেন কলকাতার কাজ শেষ না করে চলে আসায় তাঁদের ব্যথিত হওয়ার কারণ নেই। এমন ঘটনা অন্য কোন শহরেও হতে পারত। তবে একথাটা সত্যি কলকাতায় থাকার সময়ে তিনি দেখেছেন রাস্তাঘাটে মহিলাদের চলাফেরাটা বেশ আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কলকাতায় এখন ফেরার ইচ্ছে নেই। কলকাতা এখন আর নিরাপদ নয় — সেখানে কাজ করার ইচ্ছে আপাতত নেই। কলকাতায় হয়তো কোনদিন বেড়াতে যাব — তখন অনেক সতর্ক থাকবো। কলকাতাকে এখনও ভালোবাসি নিঃসন্দেহে বিশ্বাসটায় আঘাত লেগেছে।

আমার লজ্জা ছয় বছর আগের ট্রেনের সহযাত্রীর কাছে, তিনিও কলকাতাকে ভালোবেসেছিলেন। তিনি ফরাসী তরুণীর অভিজ্ঞতা জেনেছেন কিনা জানি না। ভরসা রাখুন আমরা ফিরিয়ে আনবো আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। নিশ্চয়ই পারবো।

- See more at: http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=44179#sthash.m8hNnovb.dpuf

No comments:

Post a Comment