Wednesday, July 24, 2013

দায় এড়ানো পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে সন্ত্রাস ও হিংসার দায় এড়াতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চতুর্থ দফা পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক আগের দিন মুখ্যমন্ত্রী কিছু অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার কথা শুনে এক বা দু’দিনে ভোট হয়ে গেলে একটাও খুন হতো না। জোর করে পাঁচ দিনে ভোট করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘তৃণমূল সন্ত্রাস চায় না। সবাইকে বলছি, শান্তি রাখুন। মানুষকে ভোট দিতে দিন।’ দক্ষিণবঙ্গের তিন দফার ভোট শেষ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর এই অজুহাত এবং আপ্তবাক্যের কথা মনে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কি জানেন না রক্তপাত শুরু হয়েছে নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা শুরুর হওয়ার সময় থেকে। গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি থেকে এপর্যন্ত ২৯ জন বামপন্থী কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। আক্রমণ, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগানোর ফলে গ্রামের অনেক মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে অনেককে। বামপন্থী প্রার্থীর পরিবার অত্যাচারিত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কি এসব তথ্য জানতে পারেননি? পুলিস প্রশাসন কি এই আক্রমণের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠাতে সাহস করেনি? ভোটের জন্য এই হিংসার কি যুক্তি দেবেন তৃণমূল নেত্রী! মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই জেলার পুলিস প্রশাসন রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেনি। পঞ্চায়েতমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, সরকার সরকারের মতোই চলবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। ফলে গোড়া থেকেই শাসক দলের নির্দেশে কাজ করেছে রাজ্যের প্রশাসন। মহাকরণের চাপে ডি এম, এস পি-দের পক্ষে নিরপেক্ষতা রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না।শাসক দলকে প্রশাসনের মদত দেওয়ার ফলেই হিংসা, রক্তপাত বেড়েছে। সাধারণভাবে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেই প্রশাসন ভারতের নির্বাচন কমিশন বা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ভোটের সময় নিরপেক্ষতা রক্ষা করতেই প্রশাসনকে আনা হয় কমিশনের এক্তিয়ারে। ব্যতিক্রম হলো এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচন। কমিশনকে উপেক্ষা করে সর্বদলীয় বৈঠকেও যোগ দেয়নি তৃণমূল। তৃণমূল সরকার আসার পর থেকেই রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। তৃণমূলের দুষ্কৃতী বাহিনী লাগাতার আক্রমণ চালাচ্ছে বামপন্থী ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতা ও কর্মীদের ওপর। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে ১৭টি জেলায় প্রায় ৪৮ হাজার আসনে ভোটগ্রহণের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যায় নিরাপত্তা বাহিনী দরকার। একদিনে ভোটের আয়োজন করলে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয়ের পক্ষেই নিরাপত্তা বাহিনী প্রয়োজনীয় সংখ্যায় দেওয়া সম্ভব নয়। জেলাগুলির ভৌগোলিক অবস্থান ধরে দফা ভেঙে ভোটের সময়সূচী স্থির করলে তবেই নিরাপত্তা জোরদার করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার ভোটারদের স্বার্থে নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়নি। আদালতের আদেশে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় বাহিনী নিতে বাধ্য হলেও আইনের বাধা দেখিয়ে তাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বসিয়ে রাখা হচ্ছে। দফা ভাঙার সুবিধা নিয়েছে শাসক দল। তারা তাদের সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনীকে দফা ধরে জেলায় জেলায় পাঠিয়েছে। অন্যদিকে নিরাপত্তা বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দলের পক্ষে দফাওয়াড়ি ভোটের পূর্ণ সুযোগ নিয়ে তৃণমূল নেত্রী এখন ‘একদফা’ এবং ‘শান্তির’ কথা বলে রাজনৈতিক ভণ্ডামি শুরু করছেন। নির্বাচন কমিশনের প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিলো না। রাজ্য প্রশাসনের অসহযোগিতার ফলে কমিশনের পর্যবেক্ষকরা কার্যত কোনও ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তিন দফার পর মুখ্যমন্ত্রীর শান্তির বার্তা আসলে অর্থহীন। কারণ তাদের দলের নেতারা বোমা মারার, মুণ্ডু নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। সেই হুমকির‍‌ জেরে একের পর এক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ভোটে হিংসার শিকার হচ্ছে শিশু, মহিলারা। মুখ্যমন্ত্রীর শান্তি রক্ষার সদিচ্ছা থাকলে দলের লোকেদের আগে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতেন। কিন্তু সে পথে না গিয়ে বিরোধী দল এবং কমিশনকে অভিযুক্ত করে রক্তপাতের দায় এড়াচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।

Ganashakti

No comments:

Post a Comment